পশ্চিমবঙ্গ সরকার শাসনাধীন মানুষের জন্য নানা সামাজিক, শিক্ষামূলক, আর্থিক ও স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় প্রকল্প চালু করেছে। এগুলি বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ—যেমন শিক্ষার্থী, মহিলা, কৃষক, বৃদ্ধ নাগরিক এবং আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবার ও বেকারদের সুবিধা প্রদান করছে।
এই প্রতিবেদনে আমরা ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরছি, যা আপনার বা আপনার পরিবারের উপকারে আসতে পারে। চলুন আরো জানি –
১. লক্ষ্মীর ভাণ্ডার –
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের একটি জনপ্রিয় সামাজিক নিরাপত্তার প্রকল্প, যা মূলত নারীদের জন্য মাসিক আর্থিক সহায়তা দেয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তপশিলি জাতির মহিলারা প্রতিমাসে ১,২০০ এবং সাধারণ শ্রেণির মহিলারা ১,০০০ টাকা পান।
প্রকল্পের সুবিধা:
যোগ্যতা: মহিলা বয়স ২৫-৬০ বছর, রাজ্যবাসী হতে হবে, পারিবারিক বার্ষিক আয় নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া: দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে সরাসরি আবেদন করা যেতে পারে।
ডকুমেন্টস: ভোটার কার্ড, আধার, ব্যাংক পাসবই, রেশন কার্ড ও কাস্ট সার্টিফিকেট।
২. স্বাস্থ্য সাথী –
স্বাস্থ্য সাথী একটি পরিবারভিত্তিক স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প, যেখানে প্রতি পরিবার বছরে ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসা সুবিধা পায়।
এই প্রকল্পের বিশেষত্ব হলো, মহিলার নামেই কার্ড ইস্যু করা হয়।
সুবিধা:
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তুকির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়।
৩. কন্যাশ্রী প্রকল্প –
কন্যাশ্রী প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল মেয়েদের স্কুল ছাড়তে বাধা দেওয়া এবং ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে না করার সাহায্য করা।
এই প্রকল্পে দুই স্তরে সহায়তা দেয়া হয়:
K1 (Class 8-12): বার্ষিক ৭৫০ টাকা
K2 (বয়স ১৮ হলে): এককালীন ২৫,০০০ টাকা
এই প্রকল্পের ফলে পশ্চিমবঙ্গের অনেক মেয়ে এখন উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখছে।
৪. সবুজ সাথী প্রকল্প –
সবুজ সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে সাইকেল প্রদান করা হয়। সরাসরি সরকার থেকে এই সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
মূল উদ্দেশ্য:
বিদ্যালয়ে dropout রোধ করা
শিক্ষার্থীদের সময় বাঁচানো এবং নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা।
৫. দুয়ারে সরকার কর্মসূচী –
এটি একটি প্রগতিশীল কর্মসূচী, যেখানে সরকারি কর্মীরা মানুষের দরজায় গিয়ে প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেন। দুয়ারে সরকার ক্যাম্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে আবেদন করতে
কী কী সুবিধা পাওয়া যায়?
– রেশন কার্ডের সংশোধন
– লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, কৃষক বন্ধুতে আবেদন
– স্বাস্থ্যসাথী রেজিস্ট্রেশন
– বয়স্ক ভাতা প্রকল্পে আবেদন
– রাজ্যের এই উদ্যোগগুলি সারা দেশে প্রশংসিত।
৬. খাদ্যসাথী প্রকল্প –
রাজ্য সরকার খাদ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষকে বিনামূল্যে চাল ও গম সরবরাহ করে এবং বহু পণ্যের জন্য কম মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করে।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৭. স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড –
এই প্রকল্পে সাধারণত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শিক্ষা ঋণ পাওয়া যায়। সুদের হার খুব কম এবং পড়াশোনা শেষে চাকরি পেলে ধাপে ধাপে ঋণ ফেরত দেওয়ার সুযোগ থাকে। সরকারও ভর্তুকি দেয়।
কারা সুবিধা নিতে পারেন:
– উচ্চ মাধ্যমিক পাস
– কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী
– পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে (ফি, বই, হোস্টেল, ইন্টার্নশিপ ইত্যাদি)
৮. জয় জোহর ও তপশিলি জাতি-উপজাতির পেনশন স্কিম –
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য জয় জোহর নামে একটি বিশেষ পেনশন প্রকল্প চালু করেছে।
মাসিক ভাতা: ১,০০০ টাকা পর্যন্ত।
যোগ্যতা কী: বয়স ৬০ বছরের উপর হতে হবে, রাজ্যের নাগরিক হতে হবে এবং আয় সীমিত থাকতে হবে।
৯. মানবিক প্রকল্প –
এই প্রকল্পের মাধ্যমে শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা ও অন্যান্য সাহায্য দেওয়া হয়। এটি বিশেষ করে সক্ষম নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।
১০. কৃষক বন্ধু –
এই প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা বছরে দুবার (প্রতি মরশুমে ৫০০০) সর্বমোট ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পান। এটি ফসল রোপণের খরচ, সার, বীজ ইত্যাদিতে সহায়ক।
রাজ্যে আবার বন্ধ হচ্ছে লাখ লাখ রেশন কার্ড! খাদ্য দপ্তরের নতুন ঘোষণা –
রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগগুলি সকল শ্রেণির মানুষের জন্যই উপকারে আসে – ছেলে থেকে বৃদ্ধ, মহিলা থেকে মেয়ে কেউ বাদ যায় না। যদি আপনি এখনও কোনও প্রকল্পে আবেদন না করে থাকেন, তাহলে এখনই সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে সুবিধা নিন। এই সমস্ত প্রকল্প শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগ নয়,